শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৯ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

লক্ষ্যমাত্রার চ্যালেঞ্জ নিয়ে শুরু হলো দেশব্যাপী টিকাদান কর্মসূচি

তরফ নিউজ ডেস্ক: সারাদেশে মোট এক হাজার পাঁচটি কেন্দ্রে আজ রোববার সকালে একযোগে শুরু হয়েছে করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি। তবে প্রথম পর্যায়ে যাদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে বলে নির্ধারণ করা হয়েছে তাদের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।

সময় মতোই দেশে পৌঁছেছে করোনা ভ্যাকসিন। পরিকল্পনামাফিক দ্রুত সময়ের মধ্যেই সেগুলো পৌঁছে দেওয়া হয়েছে সারা দেশে। টিকাদান কর্মসূচি শুরু করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ভ্যাকসিনেটর ও স্বেচ্ছাসেবীদের।

গত ২৮ জানুয়ারি শুরু হয়ে দুদিনের পরীক্ষামূলক টিকাদান কার্যক্রমের ফলাফল আশানুরূপ হয়েছে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের দুটি ডোজের প্রথম ডোজ নেওয়া ৫৬৭ জনের কারো মধ্যেই কোনো বড় ধরনের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।

সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, দেশের ৫৫ বছরের বেশি বয়সী ও নির্দিষ্ট কিছু পেশার প্রত্যেককেই এই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে প্রথম পর্যায়ে।

গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত সাড়ে তিন লাখেরও কম মানুষ ভ্যাকসিনের জন্য অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন। প্রথম মাসে প্রায় ৬০ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল সরকার। পরবর্তীতে এই সংখ্যা কমিয়ে ৩৫ লাখ ধরা হয়েছে।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রচারণায় ঘাটতি, অনলাইন নিবন্ধনে সমস্যা, ভ্যাকসিন সম্পর্কে ভুল তথ্য ও ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা সম্পর্কে সন্দেহপ্রবণ সংবাদ সাধারণ মানুষকে ভ্যাকসিনের প্রতি অনাগ্রহী করে তুলেছে।

আজ রোববার ভ্যাকসিনের প্রতি মানুষকে আস্থাশীল করে তোলার লক্ষ্যে বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভ্যাকসিন নিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সেখানে অন্যদের মধ্যে টিকা নিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী এস এম রেজাউল করিম, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

এছাড়াও এই কেন্দ্রে ভ্যাকসিন নিয়েছেন জাতীয় কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি ডা. মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ, ডা. সামন্ত লাল সেন, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, বিএমএ সাধারণ সম্পাদক ডা. এহতেশামুল হক ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. এমএ আজিজ।

এছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যাকসিন নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য মুহাম্মদ সামাদ ও এএসএম মাকসুদ কামাল এবং হাইকোর্ট বিভাগের তিন বিচারপতি— বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান এবং বিচারপতি কাজী জিনাত হক।

এছাড়াও সচিবালয় ক্লিনিক ভবনে ভ্যাকসিন নেন রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন।

ঢাকায় মোট ৫০টি এবং দেশের বাকি জেলাগুলোতে মোট ৯৫৫টি টিকাকেন্দ্র রয়েছে।

সপ্তাহে একদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।

রাজধানীতে ২০৪টি ও রাজধানীর বাইরে দুই হাজার ১৯৬টি দল ভ্যাকসিন দেবে।

অনলাইন নিবন্ধনের জন্য এখনো ওয়েবসাইটে যেতে হচ্ছে। কবে নাগাদ নিবন্ধনের অ্যাপ গুগলের প্লে স্টোরে পাওয়া যাবে তা বলতে পারেনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।

অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করার পরে অনেকেই তাদের মোবাইলে নিশ্চিতকরণ ম্যাসেজ পাননি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) পরিচালক মিজানুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘যারা নিবন্ধন করেছেন তাদের সবারই এসএমএস পাওয়ার কথা।’

নিবন্ধনের জন্য কারো সহযোগিতা প্রয়োজন হলে তারা টিকাকেন্দ্রগুলোতে যেতে পারেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘কেন্দ্রে গিয়ে নিবন্ধন করার পর অন্য নির্দিষ্ট দিনে আসতে হবে ভ্যাকসিন নিতে। পরবর্তীতে দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য কবে আসতে হবে তা মোবাইল ফোনের এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।’

তিনটি ব্যাচের প্রায় ৭০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন রয়েছে সরকারের কাছে। যার মধ্যে দুটি ব্যাচের মেয়াদ শেষ হবে এ বছরের এপ্রিলে এবং একটির শেষ হবে জুনে।

তবে, ভ্যাকসিনগুলোর মেয়াদ ঠিক কত তারিখে শেষ হবে তা জানাননি কর্মকর্তারা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বলছে, সরকার প্রতিদিন তিন লাখ ৬০ হাজার মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে প্রস্তুত আছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সায়েদুর রহমান ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, সরকারের কাছে ভ্যাকসিনের পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও জনগণের প্রতিক্রিয়া হতাশাব্যঞ্জক।

তিনি বলেন, ‘আমরা যদি একটি অংশের মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে না পারি তাহলে ভ্যাকসিন সার্বিকভাবে খুব বেশি উপকারে আসবে না। অবশ্যই সারাদেশে, বিশেষত বড় শহরগুলোর সবাইকে ভ্যাকসিন দিতে হবে।’

কাদের ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত না

এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেছেন, ‘গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মা, যাদের চার সপ্তাহের মধ্যে উচ্চতাপমাত্রার জ্বর হয়েছিল এবং যাদের অ্যালার্জি আছে তারা ভ্যাকসিন নেবেন না।’

যারা কোভিড-১৯ এ সংক্রমিত হয়েছিলেন তারা সুস্থ হওয়ার ২৮ দিন পর এই ভ্যাকসিন নিতে পারবেন। যারা করোনা আক্রান্ত হয়ে প্লাজমা থেরাপি নিয়েছেন তাদের ভ্যাকসিন নিতে অপেক্ষা করতে হবে অন্তত ৯০ দিন।

ডা. ফ্লোরা আরও বলেন, ‘এগুলো বলা হচ্ছে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত বৈজ্ঞানিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে। ভবিষ্যতে এগুলোর পরিবর্তন হতে পারে।’

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ‘কোভিশিল্ড’ নামের অক্সফোর্ড- অ্যাস্ট্রাজেনেকা করোনা ভ্যাকসিনের তিন কোটি ডোজ কিনেছে বাংলাদেশ। ভ্যাকসিনের ৫০ লাখ ডোজের প্রথম চালান দেশে পৌঁছেছে গত ২৫ জানুয়ারি। এর পাশাপাশি ভারত সরকারের কাছ থেকে উপহার হিসেবে কোভিশিল্ডের ২০ লাখ ডোজ পেয়েছে বাংলাদেশ।

দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পর সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ভ্যাকসিনের মজুদ আছে বাংলাদেশে।

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে সেরাম থেকে কেনা ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় চালান আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আসতে পারে।

তিনি বলেন, ‘আমরা আমদানি করতে প্রস্তুত। যখনই সরকার আমাদের ভ্যাকসিন আনতে বলবে আমরা নিয়ে আসব।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com